পাহাড় সব সময় অবহেলায় আচ্ছন্ন থাকে। শতাব্দিকাল জুড়ে পাহাড়ের সাথে অবহেলা নামক স্বত্তাটির আত্মিক সম্পর্ক। কিন্তু তারপরও পাহাড়ে কিছু কিছু ঘটনার সৃষ্টি হয়, যে ঘটনা অন্ধকার পাহাড়কে আলোকিত করে। সেই আলোয় বিচ্ছুরণ ঘটে পাহাড় জুড়ে।
পাহাড়ের কেউ যখন সাফল্যের পথ দেখায় তখন পাহাড়ের বাসিন্দারা গর্বিতবোধ করেন, আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হন এবং সেই সফলতায় উৎসব পালন করেন। পাহাড়ের এমনি একজন কন্যা মেধার প্রকাশ ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন আপন মহিমায়। তার এমন সফলতায় পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। তিনি এখন পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের রোল মডেল।
এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন, রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের মেধাবী ছাত্রী লতিফা ইয়াসমিন সুমা। বাবা মৃত ইউসুফ আলী খান স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সেজো। তার স্বামী শামীম হাসান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
সুমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলা বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স বিভাগে ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে প্রথম শ্রেণী পেয়েছেন। এরপর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই বিভাগে লেকচারার হিসেবে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন তিনি।
একান্ত সাক্ষাৎকারে সুমা বলেন, ধ্যানে-জ্ঞানে নাটক আমার স্বত্তা জুড়ে লেগেছিলো। তাইতো নাটক করার ইচ্ছে ছিলো সেই পড়াকালীন সময় থেকে। কিন্তু কিভাবে শিক্ষীকা হয়ে গেলাম তা এখনো শিহরণ জাগে না। নিয়োগ দেখলাম, পরিক্ষায় অংশ নিলাম ব্যাস শিক্ষীকা হয়ে গেলাম।
সুমা বলেন, পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। মানুষগুলোর সাথে শিক্ষার্থীরাও। আর যখন পাহাড়ের কোন শিক্ষার্থী কোন বড় স্থানে জায়গা করে নেয় তখনি মনটা গর্বে বড় হয়ে যায়। আমি জানি পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা জেলা বাইরে গিয়ে কত কষ্ট সহ্য করে লেখা-পড়া করে।
সুমা আরও বলেন, আমি নাটককে ভালবাসি। যে কারণে নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমাদের লংগদু উপজেলার ‘পাহাড়ি হাট’ নিয়ে একটি শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলাম। অসংখ্য মানুষের ভালবাসা পেয়েছি ফিল্মটি তৈরি করে। প্রশংসা কুঁড়িয়েছি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছ থেকেও। তবে ফিল্মটি নিয়ে কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি।
চবিতে সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষিকা সুমা জানান, আমি যেখানে থাকি, যে অবস্থানে থাকি, মনটা পাহাড়ে পড়ে থাকে। তাই পাহাড়ের যে কোন শিক্ষার্থী যদি চবিতে লেখা-পড়া করতে চাই এবং আমার সহযোগিতা কামনা করেন তাহলে আমার পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুমার নিয়োগ হওয়ায় পাহাড়ি অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রশংসা কুঁড়াচ্ছেন। তারাও সুমার পথ অনুসরণ করতে চাই।